সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

সারা দেশে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োগ প্রতারণাঃ স্বাস্থ্য বিভাগের আশু পদক্ষেপ জরুরী

সারা দেশে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োগ প্রতারণাঃ স্বাস্থ্য বিভাগের আশু পদক্ষেপ জরুরী
বিষয়টি অত্যান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সবাইকে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি!
বিগত ২ বছর যাবৎ আমি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি, এর প্রতিকার/করণীয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা বলেছি। কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় সবাইকে জানিয়ে সচেতন হতে বলা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।
আপনারা জানেন, সমগ্র বাংলাদেশে গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার সকল ইউনিয়নের প্রতিটি সাবেক ওয়ার্ডে (প্রতি ৬০০০ জনগোষ্ঠীর জন্য) একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত এবং এই কার্যক্রম তাঁর নামেই ব্রান্ডিং করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলির মধ্যে একটি। জনগণ আজ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সুফল ভোগ করছে। দেশে বিদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক আজ স্বাস্থ্য সেবায় একটি সুবিদিত নাম।
আপনারা এই পোস্টে সংযুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গুলো ধারাবাহিক ভাবে লক্ষ্য করুন। জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র, থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পল্লী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে যে চাকুরীর বিজ্ঞাপনগুলি দেখছেন, তাদের কর্মএলাকা সমগ্র বাংলাদেশ (জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে)। পদের সংখ্যা এবং ক্যাটাগরি যাই থাক না কেন দরখাস্ত আহবান করা হচ্ছে সারা দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায় থেকে। এবং এই প্রার্থীদের কর্মক্ষেত্রে হবে যার যার ইউনিয়ন বা উপজেলা।
বিজ্ঞাপনদাতা এই সংস্থাগুলোর কর্মপরিধি লক্ষ্য করুনঃ
১. মা ও শিশু স্বাস্থ্য
২. পরিবার পরিকল্পনা
৩. উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা
৪. প্রতিবন্ধি ও গণশিক্ষা
৫. পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ(আমারা সাধারণত বলি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি)
৬. পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক
৭. কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা (এটাই আমার মাথা ব্যাথার কারণ)
৮. স্বাস্থ্য শিক্ষা
৯. পুষ্টি চিহিৃত কমিউনিটি ক্লিনিক/স্বাস্থ্য কেন্দ্র বাস্তবায়ন (নিজ নিজ জেলায় বিভিন্ন ১০ ক্যাটাগরিতে ১৪৮৯ জন নিয়োগ)
প্রথমে এই বিজ্ঞাপনগুলি দেখতাম বিভিন্ন অখ্যাত পত্রিকায়, এখন তাদের দিন বদলেছে। এখন তাদের বিজ্ঞাপন প্রথম আলো, মানবজমিন, কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে এমনকি কারেন্ট নিউজসহ বিভিন্ন চাকুরী সংক্রান্ত অনলাইন সাইটগুলো তারা ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ পল্লী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নামের প্রতিষ্ঠানটি এককাঠি সরেস, তারা প্রতিমাসে একই বিজ্ঞাপন বিভিন্ন শেষ তারিখ (আবেদনের) দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা এবং সাইটে দিয়েছে। ছবিতে লক্ষ্য করুন একই বিজ্ঞাপনে তারা কলের কন্ঠ, মানবজমিন ও বিভিন্ন অনলাইনে দিয়েছে যার আবেদনের শেষ তারিখ ৩০/১০/২০১৭, এবং ২০ অক্টোবর ২০১৭ প্রথম আলোতে একই সংস্থার একই বিজ্ঞাপন দেখলাম যার আবেদনের শেষ তারিখ ৫/১১/২০১৭। এই সংস্থাগুলো এই বিজ্ঞাপনগুলো সারা বছরব্যাপী বিভিন্ন পত্রিকায় দিয়ে নিরাপদে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করছে!!!(পত্রিকাগুলোও বেশ! কোন রকম বাছ বিচার ছাড়াই তাদেরকে এই সুযোগ করে দিচ্ছে, এ দায় কি তারা এড়াতে পারে???)
সমস্যা হচ্ছে এই বিষয়গুলো আমরা ভুলে থাকতে চাইলেও মানুষ ভুলতে দিচ্ছে না। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা হতে ফোন পাচ্ছি, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখছি। যেহেতু কমিউনিটি ক্লিনিক সমগ্র দেশব্যাপী বিদ্যমান, সেই সুত্রে আমাদের কর্মীরা শহর বাদে সারা দেশে গ্রামে কাজ করছে, তারা বিষয়টি আমাকে জানাচ্ছে, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি।
গত ২০ অক্টোবর সাত সকালে আমাদের পাশের গ্রামের একটি ছেলে আমাকে কল দিয়েছে, সে আমার গ্রামের বাড়ী থেকে আমার নাম্বার যোগাড় করেছে। বলছে পল্লী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছে। আমি কোন সাহায্য করতে পারব কিনা জানতে চাচ্ছে। আমি বললাম তুমি যে এসএমএস পেয়েছ সেটা আমাকে ফরোয়ার্ড কর। ০১৭৮৪১০৯৭৯১ নাম্বার থেকে তাকে এসএমএস করা হয়েছে। আমি বললাম, তোমার আবেদনের শেষ তারিখ কবে ছিলো, সে বলল এ মাসের ৩০ তারিখ । অথচ সে শেষ তারিখ হওয়ার আগেই মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছে (২০ তারিখে)। এসএমএসে বলা হয়েছে ২০ তারিখ সকাল ৮টা হতে ১০ টার মধ্যে ৩০০০ (তিন হাজার টাকা), ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপস্থিত হওয়ার জন্য। তার খুব টেনশন হচ্ছিল সে টিকবে কিনা? আমি বললাম তার না টেকার কোন প্রশ্ণই উঠে না, শুধু টাকা দেওয়ার সময় যেন রশিদ চায়, আর চারপাশের কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসে। যথারীতি সে টিকেছে!! শুধু সে নয় সবাই টিকেছে>> সবাই টাকা জমা দিয়ে খুশি মনে বাড়ী ফিরে গেছে। বাড়ীতে বসে চাকুরী, আহা কি সুখ স্বপ্ন!! সেই ছেলে অবশ্য রশিদ না দেওয়ায় টাকা জমা দেয়নি। সে নাকি জিজ্ঞেস করেছিলো উপজেলায় আপনাদের অফিস কোথায়?? জবাব ছিলো নতুন নির্মান হচ্ছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে এর ব্যাপকতা!! সারা বাংলাদেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন হতে বেকার ছেলে-মেয়েরা এতে আবেদন করছে। সংখ্যাটি রীতিমতো ভয়াবহ, সবাই ভাবছে এটি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ। (এই বিজ্ঞাপন গুলোতে আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েক লাখ)। প্রত্যেককে পর্যায়ক্রমে ডেকে আপনি সিলেক্ট হয়েছেন বলে পুলিশ ভেরিফিকেশন, কাগজপত্র তৈরি করার নামে ৩০০০-৫০০০ টাকা নিচ্ছে। এই টাকাকে যদি আপনি হাজার বা লাখ দিয়ে গুন দিলে যা হয় তাই এদের আয়!!! নিশ্চিতভাবে যা বিস্ময়কর! প্রশিক্ষণের জন্য অনেকে আবার ২য় বার টাকা দিয়েছে। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এরা একটি চক্র। কখনও বারিধারা ডিওএইচএস, কখনও মহাখালী ডিওএইচএস, মোহাম্মাদপুর, মিরপুর বিভিন্ন জায়গায় বার বার ঠিকানা ও প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে এরা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা ঠকে কেই সাধারণত কিছু বলে না।
বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঠিকানা লক্ষ্য করুনঃ
১. ইউনিয়ন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রঃ বাড়ী#৩৮৮, রোড#৬, বারিধারা ডিওিএইচএস (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট);
২. বাংলাদেশ পল্লী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রঃ বাড়ী#২১৭, রোড#২, বারিধারা ডিওিএইচএস (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট);
৩. বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রঃ বাড়ী#৩০২, রোড#৪, বারিধারা ডিওিএইচএস (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬;
খেয়াল করুন, ইউনিয়ন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ পল্লী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একই জায়গায় অবস্থিত। আপনারা নিশ্চিত থাকুন পরবর্তীতে ওয়ার্ড কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নামের প্রতিষ্ঠান (নিয়োগ) এ জায়গাতে দেখতে পাবেন!!!!! বারিধারা ডিওএইচ এলাকাটা কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য একটি সুপরিচিত জায়গা, কি বলেন??
বিচিত্র এ দেশ আর তার চেয়ে বিচিত্র এ দেশের মানুষ!! এখানে মানুষ ঠকিয়ে খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। এদের কর্মকান্ড দেখে মনে হয় এ পেশাটা বেশ ঝুকিমুক্ত। মানুষ টাকা নিয়ে ঘুরছে দেওয়ার মানুষ পাচ্ছে না, এরা সেই মানুষদের কষ্ট লাঘব করছে অনেকটা। আর তারা যে বিশাল কর্মকান্ড চালাচ্ছে তাতে তাদের ডেকে এনে নোবেল দেওয়া উচিৎ!!
যাহোক বিষয়টি নিয়ে আমি বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে তারা জানে যে একটি চক্র বছরের পর বছর ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছে। কিন্তু তারা যেহেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা নয় তাই এ বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়নকারী সংস্থাকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষ প্রতারিত হওয়ার কারনে এ নিয়ে সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবমুর্তি নস্ট হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি ছাড়া কোন সংস্থা/কেউ কোন পর্যায়েই স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারে না। বেসরকারী যেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে তাদের সবাইকেই আমরা কম বেশী চিনি বা জানি। হয়ত কার্যকরী সমন্বয় সম্ভব হয় না। আপনারা খেয়াল করবেন এই প্রতিষ্ঠানগুলি সারাদেশে প্রতিটি ইউনিটে স্বাস্থ্য সেবা দিবে অথচ আমরা তাদেরকে চিনি না!(কি দূর্ভাগ্য আমাদের!)।
এগুলো নিশ্চিতভাবেই প্রতারণা! কিছু প্রতারক একটি সংস্থার রেজিষ্ট্রেশন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জনগণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই আমাদের উচিৎ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাননীয় মহাপরিচালক মহোদয়ের (Abul Kalam Azad) কাছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুনাম নষ্টকারী এইসব ভূইফোঁর সংস্থার বিরুদ্ধে কার্যকরী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরির আশু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
এ প্রতারণা হতে সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। আপনার আশেপাশের বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনকে এই প্রতারণার ব্যাপারে জানান। কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে এসব বিজ্ঞাপনের কোন সম্পর্ক নেই!

শেয়ার করুন

1 টি মন্তব্য: