আঞ্জুমান রোজী
কয়েকটা দিন পাহাড় ও সাগরেরর সাথে মিলেমিশে একাকার ছিলাম। জন-কোলাহল ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম অনেক দূরে, নির্জন এক দ্বীপে। সবুজ প্রকৃতির আদর আর পাহাড় ও সাগরের নিবিড় বন্ধন আগলে রেখেছিল আমাদের। সেই সাথে ছিল পাহাড়ের বুকে নির্জন দ্বীপে রাত্রিযাপনের ভয়াল ও দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা। যদিও গুমোট অন্ধকারে গা-ছমছম করা পরিবেশ চারদিকে, তবুও কৌতূহল আর উদ্দীপনা আমাদের উজ্জ্বীবিত করে রেখেছিল। দিনে ছিল সবুজ নির্জনতা আর রাতে ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার, যেনো এক ভৌতিক পরিবেশ। শব্দহীন এই পরিবেশে একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দও যেন কান ছুঁয়ে যায়। আরো আছে আকাশছোঁয়া ছায়া বীথিকার শতশত বছর ধরে এক বিস্ময় নিয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে থাকা। তারই মাঝদিয়ে উঁচুনিচু সরু কাঁচাপাকা পথ। চলতি পথে মনে হবে ঢেউয়ের মতো উত্থানপতনে আছি। কোথাও ঘন সবুজ, কোথাও পাথরের বিছানা, কোথাও বা সাগরের জলের ছোঁয়ায় পাহাড়ের শরীর ভিজে যাচ্ছে। আবার কোথাও পাহাড়ের ঢাল নেমে গেছে দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে অতলের তলে! সেখানে ঘাড় কাঁত করে নজর দিতেই শরীর যেনো হিম হয়ে আসে। উঁচুনিচু পাহাড়ি ঢাল বেয়ে কখনও নেমে গেছি , কখনও বা উঠেগেছি অনেক উপরে। সেই উঁচু থেকে নিজেকে মনে হয়েছে শূন্যে ভাসমান এক জড়বস্তু। দ্বীপের ঝোপজঙ্গলের মাঝে ছিন্নছিন্ন ঘরগুলো যেনো পাহাড়ের বুকে অলস হয়ে পড়ে আছে। জনারণ্য নেই, নেই কোনো কোলাহল। এখানে শুধু বাতাসের শুনশান শব্দ আর জলঢেউয়ের মিষ্টিধ্বনি। আর বিস্তৃত নীল আকাশ তার চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে প্রকৃতির অপুর্ব ভাণ্ডারকে। পাহাড় ও সাগরের আধিপত্যে মানুষ যেনো প্রকৃতির ক্রীড়নক হয়ে আছে । এখানে মানুষ প্রকৃতির কথা শোনে, আর প্রকৃতি তাদের লালন করে পরম মমতায়।
আমি আর কবি ফেরদৌস নাহার শহুরে জীবন ছেড়ে নির্জনতার খোঁজে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। ঠিক তখনই আহ্বান পেয়ে যাই এক দ্বীপবাসিনীর কাছ থেকে। যিনি বাস করেন কানাডার এক প্রভিন্স, ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার রাজধানী ভিক্টোরিয়ার নর্দান গলফ আইল্যান্ডের একটি দ্বীপে। যে দ্বীপটির নাম মেঈন আইল্যান্ড। ব্রিটিশ কলোম্বিয়া্র ভিক্টোরিয়া শহরটি অন্টারিও প্রভিন্স থেকে দক্ষিণ পশ্চিমকোণে অবস্থিত। আমরা আছি অন্টারিও প্রভিন্সের টরন্টো শহরে; এখান থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচঘন্টার ফ্লাইট। শেষপর্যন্ত একাকী নির্ভৃতচারিণী, নীনা হাসিলের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা দুজন সেই দ্বীপে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিই। নীনা হাসিল একাধারে কবি, গল্পকার, সংবাদপাঠক এবং অধুনালুপ্ত বিচিত্রার সাংবাদিকও ছিলেন একসময়। সেই সময় তাকে অনেকে নীনা ইব্রাহীম নামে চিনতেন। এমন বহুমুখী প্রতিভায় উদ্ভাসিত এই নারীর নির্জন দ্বীপবাস আমাদের মধ্যে রহস্যের বেড়াজাল বাঁধে, তাই সময়ক্ষেপণ না করে এই লোমহর্ষক রোমাঞ্চকর ভ্রমণের জন্য চঞ্চল হয়ে উঠি। দিনক্ষণ ঠিক করে ছুটে যাই সেই দ্বীপে।
খবর বিভাগঃ
শিল্প সাহিত্য