
সম্প্রতি নাটোর জেলার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সেপ্টেম্বর/২০১৭ইং মাসের সভায় একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যাহা নাটোর সহ সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। উক্ত উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় নাটোর জেলার সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে ঔষধ বিতরণের সময় ঔষধ বিতরণ রেজিষ্টারের মন্তব্য কলামে সেবা গ্রহীতার স্বাক্ষর গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই সূত্র ধরে গত ১৮.১০.২০১৭ইং তারিখে নাটোর সদর উপজেলা হাসপাতাল থেকে একটি অফিস আদেশ জারি করে সেবা গ্রহীতাদের সাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপজেলাও সহসাই এই আদেশ জারি করবে বলে মনে হচ্ছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক একটি জনগুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে অনেক আগেই এতে কোন সন্দেহ নেই। এখানে আগত সেবাগ্রহীতারা সম্পুর্ণ উৎসাহ সহকারে সেবা গ্রহন করছে এবং সেবা পাচ্ছে। ফলে এখানে অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় সর্বাধিক সংখ্যক সেবা গ্রহীতার উপস্থিতি এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিন সিসিতে যে পরিমান সেবা গ্রহীতার উপস্থিতি দেখা যায় তা সামাল দেয়া যথেষ্ঠ কষ্টসাধ্য। এমন অসংখ্য কমিউনিটি ক্লিনিক আছে যেখানে প্রতিদিন ৫০/৬০জন বা তারও বেশি সেবা গ্রহীতা সেবা গ্রহন করে থাকেন। এবং বরাবরের মতো সিএইচসিপি একাই সামাল দিচ্ছেন এই কর্মযজ্ঞ!
অনেক সিসিতে কর্মঘন্টার প্রায় পুরোটাই সেবা গ্রহীতাগন সেবা নিতে আসেন। তাদের নিয়েই সিএইচসিপিগন ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হওয়ায় এমনিতেই শিক্ষার হার কম হওয়ায় তাদের নিকট নিয়ম নীতির খুব একটা বালাই নেই। সিসিতে আসা মাত্রই তারা সেবা/ঔষধ চায়, ইচ্ছে মত না দিলে কি পরিস্থিতি হয় তা সবারই জানা। সিসিতে দায়িত্বপালনের বেশিরভাগ সময় সেবা গ্রহীতাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর অনলাইনে সময় দিতে হয়। সকল রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লিট করে বাসায় যেতে যেতে সিএইচসিপিদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। কচ্ছপ গতির নেটওয়ার্ক আর সার্ভার ডাউনের কারণে সিএইচসিপিরা ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে দিতে হচ্ছে কম্পিউটারের সামনে। সিসি থেকে এসে গভীর রাত পর্যন্ত সময় দিতে হচ্ছে অনলাইনে। এতে করে অনেক সিএইচসিপির পরিবারে পারিবারিক কলহ দেখা দিচ্ছে! যা অনভিপ্রেত।
এতো সমস্যার মধ্যে এখন নাটোর জেলার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি চাপিয়ে দিচ্ছে সাক্ষরের নামে নতুন আরেক জামেলা! কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে প্রায় ১৩,৮৬১টি ক্লিনিক চালু রয়েছে। প্রকল্পের সিদ্ধান্ত/নির্দেশনা মোতাবেক সকল সিসি চলমান। কিন্তু নাটোর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি কিভাবে এতো বড় একটি প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ বিভাগকে পাশ কেটে একটি জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বিচ্ছন্ন ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এবং তা বাধ্যতামূলক করে দেয় তা বোধগম্য নয়! কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ে এই সিদ্ধান্তের কারণ কি? এখানে কর্মরতরাতো চুরি করে ঔষধ বিক্রি করেনা! তাহলে এই অবিশ্বাসের কারণ কি?
নাটোর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি কমিউনিটি ক্নিনিকের মত একটি সফল প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এভাবে বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করার কতটুকু এখতিয়ার রাখে তা আমার জানা নেই। এই সুযোগে নাটোর জেলার মত অন্যান্য জেলা উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের ইচ্ছে মত নতুন নতুন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে যা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ছোট করে দেখা ছাড়া আর কিছুই নয়! আমি মনে করি কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ে যদি সিদ্ধান্ত দিতে হয় সেটা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দিবেন এবং সেটা সিএইচসিপিরা মানতে বাধ্য। অন্যথায় বিশৃংখলা অবশ্যম্ভাবী বলে মনে হয়। প্রত্যকেই যদি সিদ্ধান্ত দিতে থাকে তাহলে বিশৃংখলাই অবধারিত।
কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সারাদেশের সিএইচসিপিরা মনে করে প্রকল্পের কর্মকর্তাগন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঠিক ও যুগোউপযোগী নির্দেশনায় কমিউনিটি ক্লিনিক সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছে এবং এযাবত কালের সবচাইতে সফল প্রকল্প হিসাবে সফলতা অর্জন করেছে।
শ্রদ্ধেয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের নিকট বিনীত অনুরোধ, নাটোর জেলার সিদ্ধান্ত বিষয়ে আপনাদের সুচিন্তিত নির্দেশনা কাম্য।
সবাইকে ধন্যবাদ।
::::
খবর বিভাগঃ
প্রথম পাতা
বাংলাদেশ সিএইচসিপি
